Home ব্লগিং ওয়েব এন্ড ডোমেইন হোস্টিং ওয়েব হোস্টিং এর বিস্তারিত

ওয়েব হোস্টিং এর বিস্তারিত

0

আসসালামু আলাইকুম, উড্ডয়নে আপনাকে স্বাগতম!
কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন।

আজ আমরা আলাপ করবো বিভিন্ন প্রকার ওয়েব হোস্টিং সম্পর্কে, কোন হোস্টিংটি আপনার / আপনার কোম্পানির জন্য ভালো হবে?

আগের পোষ্টে আমরা ডোমেইন আর ওয়েব হোস্টিং সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি, এই পোষ্টে আমরা হোস্টিং এর প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

এই পোস্ট পড়লে আপনি এ টু জেড সব বুঝতে পারবেন এবং আপনার / আপনার কোম্পানির জন্য কোন হোস্টিং প্লেনটি প্রয়োজন তা খুব সহজে ডিসাইড নিতে পারবেন।।

হোস্টিং অনেক প্রকারের হয়ে থাকে যেমন:

  • শেয়ার্ড হোস্টিং (Shared  Hosting).
  • ডেডিকেটেড হোস্টিং (Dedicated Hosting).
  • VPS বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার (Virtual Private Server).
  • ক্লাউড হোস্টিং (Cloud Hosting).
  • রিসেলার হোস্টিং (Re-seller Hosting).
  • ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং (WP Hosting) ইত্যাদি।

চলুন এগুলোর বিস্তারিত জেনে নেইঃ

** শেয়ার্ড হোস্টিং (Shared Hosting): শেয়ার্ড হোস্টিং বাংলাদেশ সহ অনেক দেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় হোস্টিং, কারণ হচ্ছে এর সহজলভ্যতা। মূলত আমরা সাধারণত যে হোস্টিংগুলো ব্যাবহার করে থাকি বা বিভিন্ন হোস্টিং কোম্পানি কম মূল্যে যে হোস্টিং অফার করে থাকে তাই হচ্ছে শেয়ার্ড হোস্টিং।

shared web hosting

আপনার যদি প্রফেশনাল বা কোন বড় সাইট থেকে থাকে বা আপনার যদি বড় কোন প্রজেক্ট হয়ে থাকে তাহলে আপনার জন্য অবশ্যই একটা স্বয়ংসম্পূর্ন সার্ভারের নির্দিষ্ট পরিমান সার্ভিস দরকার। কিন্তু যাদের ছোট ওয়েবসাইট বা যারা নতুন ওয়েবসাইট বানানোর কথা ভাবছেন তাদের জন্য শেয়ার্ড হোস্টিং (Shared Hosting)-ই সবচেয়ে উপযুক্ত।
শেয়ার্ড হোস্টিং এর কিছু কথা জেনে রাখুন,

  • এই সার্ভারের কিন্তু নিরাপত্তা কম থাকে।
  • এখানে একসাথে অনেক অনেক Client এর সাইট (১০/২০/৫০ বা আরও বেশি) একসাথে হোস্ট করা থাকে। এছাড়া
  • ডেটাবেস, ইমেইল, ব্যান্ডওয়াইথ এবং অন্যান্য সকল সুবিধা খুবই সীমিত।

কিন্তু আপনি যদি মোটামুটি ভালো হোস্টিং প্রোভাইডারের থেকে শেয়ার্ড হোস্টিং কিনে থাকেন তাহলে সেই হোস্টিং প্যাকেজের সাথে মিনিমাম এই সুবিধা গুলি পেতে পারেনঃ

  • ৯৯.৯% আপটাইম
  • আনলিমিটেড ডিস্ক স্পেস (আসলে ১ লক্ষ ফাইল পার হলে আর আপলোড করতে দেয়না)
  • আনলিমিটেড ব্যান্ডওয়াইডথ
  • আনলিমিটেড ডেটাবেস
  • ফ্রি cPanel

তবে কোন ডেডিকেটেড আইপি পাবেন না, সার্ভারে কোন সফটওয়্যার ইনস্টল করতে পারবেন না এছাড়াও আরো অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে।
গোপন কথা হচ্ছে আপনি যদি তাদের মুল সার্ভারের CPU -এর ২৫%-এর বেশি ব্যবহার করে ফেলেন তখন দেখবেন তারা নানান ধরণের টালবাহানা শুরু করে দিবে। যেহেতু তাদের প্লেনে আনলিমিটেড লেখা থাকে তাই সরাসরি তারা আপনাকে কিছু বলবেনা, আপনাকে ডেডিকেটেড সার্ভার নিতেও বলবেনা, কারণ শেয়ার্ড হোস্টিং -এ তাদের লাভ বেশি, 🙂 উনারা যখন দেখবে আপনার সাইটে প্রচুর হিট পড়ে তখন ইনিয়ে বিনিয়ে নানান কথা এবং কাজের মাধ্যমে আপনাকে বুঝাতে চাইবে তারাতারি ডেডিকেটেড সার্ভার নিন।
কিন্তু আপনি যদি তাদের এই কথা না বোঝেন তাহলে আস্তে আস্তে তারা আপনার সাইট বন্ধ / ডাউন করে দিবে।
মূলত আপনার কাজের উপর নির্ভর করবে আপনার শেয়ার্ড হোস্টিং চলবে কিনা। ধরুন আপনি আপনার পার্সোনাল ব্লগ / কোম্পানির একটি ছোটোখাটো ওয়েবসাইট বানালে আমি আপনাকে প্রথমে শেয়ার্ড হোস্টিং নিতে বলবো। কারণ প্রথমে বেশি টাকা দিয়ে ডেডিকেটেড সার্ভার নেয়া খুবই বোকামি।
মোটামুটি ভালোমানের একটি শেয়ার্ড হোস্টিং প্যাকেজ নিলে বছরে ৫ – ৭ হাজার টাকা খরচ পড়তে পারে।

** ডেডিকেটেড হোস্টিং (Dedicated Hosting): ডেডিকেটেড হোস্টিং এর জন্য ডেডিকেটেড সার্ভার প্রয়োজন। এটা হোস্টিং কিন্তু অনেক ব্যায়বহুল। যদি আপনার ওয়েবসাইটি অনেক বড় বা ভারী হয় এবং খুব বেশি নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়, শুধুমাত্র তখন এই হোস্টিং ব্যবহার করতে হয়।
আপনি আপনার ব্যবহারের উপর হার্ডওয়্যার নির্ধারণ করতে পাবেন। আপনি যত পাওয়ারফুল হার্ডওয়্যার ব্যবহার করবেন তার অনুপাতে আপনার খরচ হবে।

ডেডিকেটেড হোস্টিং ২ প্রকারঃ
1. Managed Hosting: আপনি যদি ম্যানেজড হোস্টিং নেন তাহলে আপনি যাদের থেকে হোস্টিং নিবেন সেই হোস্টিং প্রোভাইডাররাই আপনার সকল কাজ করে দেবে যেমন: সিকুরিটি, সার্ভার সেটাপ / ম্যানেজ, নেটওয়ার্ক কনফিগার / রি-কনফিগার, যেকোনো সফটওয়ার ইনস্টল দেয়া সহ সকল প্রয়োজনীয় কাজই আপনার হয়ে তারা করে দিবে। কিন্তু এই ম্যানেজড হোস্টিং -এ আপনাকে অনেক পরিমান খরচ গুনতে হবে, যেহেতু আপনার সকল কাজ তারাই করে দিবে তাই খরচটা একটু বেশি হবেই।

2. Un-managed Hosting: আপনি যদি আন-ম্যানেজড হোস্টিং নিয়ে থাকেন তাহলে আপনাকেই আপনার ওয়েব সার্ভারের সকল কাজ করে নিতে নিতে হবে, এক্ষেত্রে হোস্টিং প্রোভাইডার আপনাকে শুধুমাত্র আপনাকে একটি আইপি, সাথে ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড আর সেটিং করার জন্য একটি ইউআরএল দিবে। আন-ম্যানেজড হোস্টিং -এ আপনার অর্থ অনেক অনেক গুন বেশি সেভ হবে।
ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই, আপনি চাইলেই সার্ভার ম্যানেজ করতে পারবেন, মেক্সিমাম বলতে ৯০% সার্ভার লিনাক্স ভিত্তিক হয়ে থাকে, তাই আপনি যদি লিনাক্স নিয়ে ঘাটাঘাটি করেন তাহলে খুব সহজেই সার্ভার ম্যানেজ করা শিখে যাবেন। এছাড়াও ইন্টারনেটে হাজার হাজার টিউটোরিয়াল আছে, প্রয়োজন হলে সেগুলো দেখেই সার্ভার ম্যানেজ করে নিতে পারবেন। আর সবকিছুই পাবেন মনের মতো সাথে আনলিমিটেড তো থাকছেই। 🙂

ডেডিকেটেড হোস্টিংটি কিন্তু সাজিয়ে নিতে পারবেন আপনার মনের মতো করে, ঠিক যেমন আপনি কম্পিউটার কেনার সময় মনের মতো করে সব কিছু কনফিগার করে নেন তেমন করেই।
ডেডিকেটেড হোস্টিং-এর হোস্টিং প্যাকেজ কেনার জন্য প্রতি মাসে প্রায় ৫/৭ হাজার টাকা খরচ হবে (কোম্পানি অনুপাতে খরচ বাড়বে / কমবে), মানে বছরে প্রায় কমবেশি ১,০০,০০০ টাকা (কোম্পানি অনুপাতে খরচ বাড়বে / কমবে)।

** VPS বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার (Virtual Private Server): VPS বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার হোস্টিং হচ্ছে শেয়ারড আর ডেডিকেটেড হোস্টিং এর মাঝামাঝি টাইপের হোস্টিং।

ডেডিকেটেড সার্ভারে আপনাকে সকল হার্ডওয়্যার রিসোর্স দিয়ে দিবে এবং আপনার সাইট আপনার কেনা একটি সার্ভারেই থাকবে। আর শেয়ারড হোস্টিং -এ আপনার সাইটের সাথে থাকবে আরো অনেক শত বা হাজার সাইট। বিস্তারিত উপরেই দেয়া আছে। ভিপিএস হোস্টিং -এ সাধারনত ডেডিকেটেড সার্ভার অল্প কয়েকজনকে ভাগ করে দেয়। যেমন ধরুন, ১৬ জিবি র‍্যামের একটা সার্ভার থেকে আপনাকে নিলেন ৪/৫ জিবি এবং বাকি যেই ২/৩ জন থাকবে তাদের ইচ্ছে মতো তারা সব রিসোর্স ভাগ করে নিতে পারবে, অনেকটা যার যেমন চাহিদা ঠিক তেমন। ডেডিকেটেড সার্ভারের মতই আপনি আপনার মত যেকোন সফটওয়্যার ইনস্টল করতে পারবেন। যার কারণে আপনার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুর বিল ই পরিশোধ করতে পারবেন, বাড়তি বিলের ঝামেলা নেই তাই আপনার কিছু অর্থও সেভ হবে।

** ক্লাউড হোস্টিং (Cloud Hosting): যখন আমরা একটি ওয়েবসাইট হোস্টিং করি, তখন তা একটি নির্দিষ্ট সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু ক্লাউড হোস্টিং সম্পূর্ণ আলাদা একটি হোস্টিং, ক্লাউড সার্ভার মূলত প্রতিটি অঞ্চলে তাদের আলাদা সার্ভার এর ব্যবস্থা রাখে, যেমন এশিয়া, ইউরোপ ইত্যাদি, এটি একটি সার্ভারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন সার্ভার ক্লাউড এর মাধ্যমে ইউজারের কাছে খুব সহজ ও দ্রুত আপনার সাইটটিকে পৌছাতে পারে। এটির ব্যাপ্তি ভিন্ন ভিন্ন দেশে লোকাল সার্ভার হিসেবে সংরক্ষিত থাকে তাই একটি সার্ভার ক্রাশ করলেও অন্য গুলো থেকে আপনার সাইটে ঠিকই সংযোগ থাকবে এবং আপনি আপনার ওয়েবসাইটের ১০০% আপটাইম পাবেন।

বেশিরভাগ ক্লাউড হোস্টিং কম্পানি তাদের হোস্টিং সেবা কন্টেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক (সি.ডি.এন) -এর মাধ্যমে দিয়ে থাকে। অর্থাৎ, আপনার মূল সার্ভার যদি ইউ.এস.এ বা ইউ.কে -তে থাকে তাহলেও আপনার সাইট লোড হবে ইউজারের কাছাকাছি সি.ডি.এন সার্ভার থেকে অর্থাৎ, কেউ যখন আপনার সাইটে এশিয়া থেকে ভিজিট করবে, তখন আপনার সাইটটি লোড হবে এশিয়ায় অবস্থিত সি.ডি.এন সার্ভার থেকে। এজন্যই ক্লাউড হোস্টিং -এর মাধ্যমে একটি সাইট লোডের স্পিড ৩০%-৪০% বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু ক্লাউড হোস্টিং এর একটি বড় অসুবিধা হচ্ছে এটি অনেক ব্যায়বহুল।
আর আপনি যদি আপনার সাইটের ১০০% আপটাইম পেতে চান সাথে দ্রুত লোডিং তাহলে আপনার জন্য রয়েছে ক্লাউড হোস্টিং।

** রিসেলার হোস্টিং (Re-Seller Hosting): রিসেলার হোস্টিং হচ্ছে এক ধরনের ওয়েব হোস্টিং যা আপনি আপনার ওয়েব হোস্টিং প্রোভাইডারের কাছ থেকে ক্রয় করবেন বা ভাড়া নিবেন এবং সেখান থেকে কিছু কিছু করে আপনার ক্লায়েন্টদের কাছে বিক্রি করে আয় করবেন।

রিসেলার ওয়েব হোস্টিং কিন্তু ওয়েব হোস্টিং এর একটি অংশ। রিসেলার তার একাউন্ট থেকে আপনাকে নিজের আন্ডারে রেখে একটি একাউন্ট করে দিবে, সেই একাউন্ট থেকে আপনি একাধিক হোস্টিং একাউন্ট তৈরি করে অন্যদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। সহজ ভাষায় একজন রিসেলার একটি হোস্টিং প্রোভাইডার কোম্পানির কাছ থেকে ওয়েব হোস্টিং কিনে মার্কেটে তার ক্রেতাদের কাছে সেল করে। একজন রিসেলার হোলসেল দামে রিসেলার হোস্টিং কিনে নিজের ইচ্ছা মত প্যাকেজ তৈরী করে মার্কেটে সেল করতে পারে এবং নিজের প্রয়োজনেও ব্যাবহার করতে পারে।

** ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং (WP Hosting): ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিংয়ের মাধ্যমে হোস্ট করা ওয়েবসাইট মূলত সাধারণ হোস্টিংয়ের চেয়ে অনেক বেশি সুবিধা দিয়ে থাকে। আপনার ব্যবসা প্রসারের পরিকল্পনা যদি হয় বৃহৎ আকারের এবং আপনি যদি অনলাইনে ভালো করে নিজের অবস্থান সেট করতে চান তাহলে অবশ্যই ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং আপনার জন্য।

এটি মূলত ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরী করা সাইটের জন্য খুব দরকারি। এটি অনেকটা ক্লাউড হোস্টিংয়ের মতো। আর ভালো মানের ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং আপনার অনলাইন বিজিনেস -এর লক্ষ্য ও সাফল্য বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। এই হোস্টিংয়ের বিশেষ সুবিধা হচ্ছে, ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টলেশন, ওয়েবসাইটের স্পিড, ওয়েবসাইট নিরাপত্তা, প্লাগইন, ব্যাকআপ, আপডেট, ক্যাশে এবং সবকিছু এবং ওয়ার্ডপ্রেস পরিচালনার জন্য সকল প্রয়োজনীয় উপাদান। আপনার ওয়েবসাইটের ট্র্যাফিক যদি অনেক বেশি হয় তাহলে ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং আপনার জন্য ভালো হবে, কিন্তু দামের দিক থেকে ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং স্বাভাবিক হোস্টিং এর ছেড়ে একটু বেশী খরচ পড়বে।

error: Content is protected !!
Exit mobile version