বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪

ক্রিপ্টোকারেন্সি

আসসালামু আলাইকুম, উড্ডয়নে আপনাকে স্বাগতম!
আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন।

আজ আমরা কথা বলবো ক্রিপ্টোকারেন্সি বা গুপ্তমুদ্রা নিয়ে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি (গুপ্তমুদ্রা) হচ্ছে বাইনারি উপাত্তের একটি সংকলন যা এখন বিনিময়ের মাধ্যম (অর্থ আদান-প্রদান) হিসেবে কাজ করে। এই ক্রিপ্টোকারেন্সি বা গুপ্তমুদ্রার অস্তিত্ব শুধুমাত্র ইন্টারনেট (অনলাইন) জগতেই বিদ্যমান।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে শুধুমাত্র অনলাইনেই লেনদেন করা সম্ভব যা গুপ্তলিখন নামক একটি অতি-সুরক্ষিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি অনেক আগ থেকে থাকলেও ২০১৭ সাল থেকে এটি সবার জন্যই উঠতি বাজারে পরিণত হয়েছে।

বিবরণঃ ক্রিপ্টোকারেন্সি বা গুপ্তমুদ্রা এক ধরনের পিয়ার টু পিয়ার লেনদেন ব্যবস্থা। ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার এ কোন তৃতীয় পক্ষের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাই ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে কে কার সাথে বিনিময় করছে তা অন্য কোন তৃতীয় পক্ষে জানতে পারে না। আবার ক্রিপ্টোকারেন্সি বা গুপ্তমুদ্রা লেনদেন করার সময় পরিচয় গোপন রেখেও লেনদেন করা যায়। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি বা গুপ্তমুদ্রার এনক্রিপটেড লেজার (গুপ্তায়িত খতিয়ান) সব লেনদেনকে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার হাত থেকে নিয়ন্ত্রণ করে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি / গুপ্তমুদ্রার মানের উপর কোন দেশের সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না আর তাই পৃথিবীর অনেক দেশেই এই ডিজিটাল মুদ্রার উপর সে দেশের সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে।

উদাহরণঃ সাধারণ-ভাবে আমরা যখন কারো নিকট টাকা পাঠাই / পাঠাতে চাই, তখন আমাদের ব্যাংকের সাহায্য নিতে হয়। আবার যদি ব্যাংক খোলা না থাকে তাহলে আমরা মোবাইল ব্যাংকিং (গুগল পে, পেটিএম, ফোনপে, অ্যামাজন পে, বিকাশ, নগদ ইত্যাদি ) বা কুরিয়ার ও পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাঠাই। এই প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান কিছু সেবা-মাশুল আদায় করে থাকে। সহজভাবে বলা যায় আমরা কাউকে টাকা পাঠালে তৃতীয় পক্ষের সহায়তা নেই তার বিনিময়ে তাদের সেবার চার্জ দেই কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সি / গুপ্তমুদ্রাতে সেবা দানকারী ও গ্রহণকারী ব্যতীত অন্য কোন তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন হয় না, তাই এর জন্য বাড়তি কোন মাশুলও দিতে হয় না। তবে সর্বনিম্ন কিছু চার্জ বা মাশুল রয়েছে।

আরো সহজে বোঝাতে চাইলে কিছু অ্যাপ্লিকেশন ভিত্তিক সার্ভিসের সাথে তুলনা দিয়ে বুঝানো যায় যেমন ধরুনঃ
মোবাইলে মাই জিপি, মাই এয়ারটেল, ডিংটন, ক্যাম স্ক্যান ইত্যাদি আমরা ব্যবহার করি যেখানে আমাদের একাউন্ট রয়েছে এখন এই একাউন্টে যখন আমরা রিচার্জ করি তখন কিছু পয়েন্ট পাই যা দিয়ে ডেটা (ইন্টারনেট) কেনা যায় আবার অ্যাপ থেকে বিজ্ঞাপন দেখেও পয়েন্ট আয় করা যায় যা দিয়ে কথা বলা ও ক্লাউড স্পেস / অন্য সার্ভিস পেতে পারি।

গুপ্তমুদ্রার তালিকাঃ পৃথিবীতে প্রায় ১ (এক) হাজারেরও উপর ক্রিপ্টোকারেন্সি / গুপ্তমুদ্রা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে
• বিটকয়েন
• ইথেরিয়াম
• লাইটকয়েন
• রিপল
• মোনেরো
• ড্যাশ
• বাইটকয়েন
• ডোজকয়েন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
আর এগুলোর মধ্যে বিটকয়েন হচ্ছে সবার পূর্বসূরী এবং সবচেয়ে পরিচিত। মূলত বিটকয়েন এর সফলতার কারণেই অন্য আরো অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী গুপ্তমুদ্রার জন্ম হয়।

ইতিহাসঃ ১৯৮৩ সালের দিকে মার্কিন গুপ্ত-লিখনবিদ ডেভিড চৌম গুপ্তলৈখিক পদ্ধতিতে ডিজিটাল মাধ্যমে টাকা/মুদ্রা আদান প্রদানের বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেন। তিনি এর নাম দিয়েছিলেন ই-ক্যাশ (ইলেকট্রিক ক্যাশ)।
১৯৯৫ সালে তিনি ডিজি-ক্যাশের মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবস্থার একটি প্রাথমিক রূপ বাস্তবায়নের দিকে এগুতে থাকেন। পরবর্তীতে সফটওয়্যার এ নির্দিষ্ট ক্রিপ্টো কি প্রবেশের পর প্রাপক প্রেরণকারীর অর্থ পেয়ে যান।
তবে এই অর্থ কোনও রাষ্ট্রীয় পরিচালিত মুদ্রা (রুপি / টাকা / ডলার / পাউন্ড) নয়। এটি সম্পূর্ণ অস্তিত্বহীন একটি পয়েন্ট যা চোখে দেখা যায় হাতে ধরা / স্পর্শ করা যায় না।

তবে সাতোশি-নাকামোতো (ব্যক্তি বা গ্রুপ) প্রথম সফলভাবে কেন্দ্রীয় সংস্থা বিহীন ডিজিটাল ভাবে অর্থে মূল্য পরিশোধ এর ব্যবস্থা চালু করে যা বর্তমানে বিটকয়েন নামে পরিচিত।

পদ্ধতিঃ ক্রিপ্টোকারেন্সি বা গুপ্তমুদ্রা যেহেতু সম্পূর্ণ অস্তিত্বহীন একটি মুদ্রা যা পিয়ার টু পিয়ার ব্যবস্থার মাধ্যমে সরাসরি প্রেরক থেকে প্রাপকের কাছে যায়। সেহেতু এর বিনিময় পদ্ধতিও সম্পূর্ণ আলাদা।

ওয়ালেটঃ ওয়ালেট বা মানিব্যাগ। যা অনলাইন ও অফলাইন দুই ধরনেরই হয়। ওয়ালেট থেকে প্রেরণকারী তার প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ পাঠাতে পারে; আর গ্রহণকারী নিজের ওয়ালেটে সেই অর্থ জমা করে রাখতে পারে। ক্রিপ্টোকারেন্সি বা গুপ্তমুদ্রার প্রতিটি ওয়ালেটে একটি নিদির্ষ্ট এনক্রিপ্টেড এড্রেস বা ঠিকানা থাকে। যেমন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এ নির্দিষ্ট ব্যক্তি / প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট নাম্বার তেমন ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য নিদির্ষ্ট এনক্রিপ্টেড এড্রেস।

ব্লকচেইনঃ এক অ্যাড্রেস / ঠিকানা থেকে অন্য অ্যাড্রেস / ঠিকানায় ক্রিপ্টোকারেন্সি পাঠানোর সময় তা এনক্রিপটেড লেজার (উন্মুক্ত খতিয়ান) -এ রেকর্ড হয়; যাকে ব্লকচেইন বলে। এই ব্লকচেইন এ জমা থাকা তথ্য পৃথিবী যে কোন স্থান থেকেই দেখা সম্ভব। যেমন বর্তমানে সকল ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং / অ্যাপ রয়েছে যা দিয়ে আপনি যে কোন দেশ থেকে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এর সকল তথ্য দেখতে পারেন।

খনন / মাইনিংঃ ব্লকচেইনে লিপিবদ্ধ প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লেনদেনের বৈধতার নির্ণয়করণকে বলা হয় খনন বা মাইনিং। আর এই মাইনিং এর কাজ যারা করে তাদেরকে বলা হয় খননকারী বা মাইনার। ফলে এখানে কোন ধরনের প্রতারণার সম্ভাবনাই থাকে না। উভয় পক্ষেরই পরিচয় গোপন থাকে।

বৈশিষ্ট্যঃ
• দ্রুততম লেনদেন প্রক্রিয়া।
• প্রত্যেক ব্যবহারকারীই তার ডিজিটাল মুদ্রার মালিক। অন্য কেউ তার মালিকানা নিতে পারে না পারবেও না।
• একজন ব্যবহারকারী তার ইচ্ছে মত কয়েকটি একাউন্ট খুলতে পারেন। এজন্য বাক্তির নাম, ঠিকানা বা ব্যক্তিগত কোন তথ্যের প্রয়োজন হয় না।
• ব্লকচেইনে জমা থাকা লেনদেনের তথ্য আপনি পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকে দেখতে পারবেন তাই এখানে কোন দুর্ণীতির সুযোগ নেই।
• এটি একবার কাউকে দিয়ে দিলে আর ফেরত পাবেন না / এটি সম্পূর্ণ অফেরত যোগ্য। তাই ভুল অ্যাড্রেস / ঠিকানায় যদি আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি চলে যায় বা আপনি ভুল করে পাঠান তাহলে তা আর ফেরত পাবেন না।

প্রচারঃ ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম রোবো-কয়েনের (বিটকয়েনের) এটিএম বুথ চালু হয়। অস্টিন ও টেক্সাসেও এইকম একটি এটিএম বুথ আছে কিন্তু এর স্ক্যানার পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স এর তথ্য পড়তে পারে। নভেম্বর ২০২২ পর্যন্ত সারা বিশ্বে (৭৮টি দেশে) ৩৮,৮৯২টি বিটকয়েন এটিএম স্থাপন করা হয়। যা ক্রমশ বেড়ে চলছে।

জনপ্রিয়তাঃ বর্তমানে বিশ্বের প্রায় বহুদেশে অনলাইন কেনাকাটার জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে পেপাল, উইকিপিডিয়া, ওয়ার্ডপ্রেস, মাইক্রোসফটের মত প্রায় ৩ লক্ষের বেশি প্রতিষ্ঠান ক্রিপ্টোকারেন্সি গ্রহণ করে।

মূল্যঃ ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য দিন কে দিন বেড়েই চলেছে। এর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এর খনন প্রক্রিয়া; এটি খনন করার জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী কম্পিউটার ও সার্ভার ও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ।

এশিয়ায় প্রবেশঃ ২০১৪ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশ এশিয়ার মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে বিটকয়েন ফাউন্ডেশনের সাথে যুক্ত হয়। তবে বাংলাদেশের সরকার বিটকয়েনের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে।

অপব্যবহারঃ ক্রিপ্টোকারেন্সি সংরক্ষণের জন্য কোন ধরনের সংরক্ষণাগার নেই। তাই ব্যাকআপ না থাকার কারনে কম্পিউটার ক্রাশের মাধ্যমে মুছে যেতে পারে সব তথ্য উপাত্ত; এছাড়াও রয়েছে হ্যাকিং ও ম্যালওয়্যার আক্রমণের হুমকিও; সাথে রয়েছে ডিজিটাল অর্থ চুরির আশংকা। গত ৩৯ বছরের ইতিহাসে এ পর্যন্ত বিটকয়েন এ ৫০টিরও বেশি চুরির শিকার হয়েছে।

আজকের মত এই পর্যন্তই, পরবর্তী পোস্টে অন্য কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন। আল্লাহ্‌ হাফেজ।

লেখক পরিচিতিঃ

Faruk Hossain Mithu
Faruk Hossain Mithuhttps://mithu.kholifa.com
I'm Linux Admin, traveler with a passion for movies, tech and programming. Navigating the digital realm with expertise, I enjoy exploring diverse landscapes and staying at the forefront of technology trends. Code enthusiast and cinephile, blending a love for innovation with a sense of adventure.
- বিজ্ঞাপন -
সম্পর্কিত পোস্টগুলো
- বিজ্ঞাপন -

জনপ্রিয় পোস্টগুলো

- বিজ্ঞাপন -
error: Content is protected !!