সোমবার, মে ২০, ২০২৪

অনলাইন পেমেন্ট বাংলাদেশ

আসসালামু আলাইকুম, উড্ডয়নে আপনাকে স্বাগতম!
কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন।

আজ আমরা আলাপ করবো কিভাবে বাংলাদেশ থেকে ইন্টারন্যাশনাল কার্ড ব্যবহার করবেন তা নিয়ে।

আপনি কি বাংলাদেশ থেকে অনলাইন পেমেন্ট-এর জন্য উপযুক্ত সমাধান পেতে চান? আমরা আপনাকে সহজ ও সঠিক তথ্য পেতে সাহায্য করবো…
কিভাবে আপনি বাংলাদেশ থেকে সহজেই অনলাইন পেমেন্ট করবেন তার এ টু জেড বিস্তারিত থাকছে এই পোস্টে, কিন্তু আপনাকে ধর্য্য সহকারে এই পোস্টটি পড়তে হবে।

চলুন শুরু করিঃ

আজ আমরা আলোচনা করবো বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের অনলাইন পেমেন্টের সহজ সমাধান নিয়ে।

একজন বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সার মানেই তার মনের আকুতি কখন বাংলাদেশে পেপাল তাদের সেবা কার্যক্রম শুরু করবে!
এবং ২/৩ দিন পরপর পেপাল-এ ব্রাউজ করে দেখা কান্ট্রি লিষ্টে বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে কিনা? 🙁

ফ্রিল্যান্সার মানেই পেপালের প্রয়োজন ১০০% এবং পেপাল সকলের জন্য সহজ আন্তর্জাতিক লেনদেনের একটি প্রধান গেটওয়ে।
কিন্তু নিরাপত্তার কারণে এবং আমাদের ব্যাংক নীতির কারণে পেপাল আগামী ৫/১০ বছরে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করবে কিনা তার তথ্য কারোর কাছেই নেই। সেই ২০০৯ থেকেই শুনে আসছি যে, পেপাল আগামী ১/২ মাস / বছরের মধ্যেই বাংলাদেশে তাদের সেবা শুরু করবে!
কিন্তু সেই ১/২ মাস / বছর বাস্তবে আমাদের সামনে কখনোই আসেনি। 🙁

এবার চলুন দেখি বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ কিভাবে তাদের অর্থ বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে ব্যয় করতে চায় তার সম্পর্কে জেনে নেই। 🙂

USD লোডিং সেবা প্রদানের জন্য মাঝে মাঝেই অনেকের কাছ থেকে অনেক অনুরোধ পাই। ভাই পাইওনিরে কিছু ডলার দেন, নেটেলারে কিছু ডলার দেন, ইত্যাদি ইত্যাদি…

যখন ডলারের এমাউন্ট বেশ বড় থাকে তখন আমি অনেককেই মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করি ভাই এতো ডলার দিয়ে কি করবেন (আমি কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছি যে তাদের কেন USD এর প্রয়োজন হয় বা কি কাজে তারা এই ডলার ব্যয় করতে চায়)। মেক্সিমাম মানুষ আমাকে ঘুরেফিরে কিছু কথাই বলেছে যেমন-

  • ফেসবুক বিজ্ঞাপন দিবো।
  • ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনবো।
  • গুগুলে বিজ্ঞাপন দিবো।
  • অনলাইন থেকে কিছু প্রোডাক্টস কিনবো।

তো আমি মোটামুটি ধারণা করে নিয়েছি, তাদের থেকে অধিকাংশ মানুষই ফেসবুক বিজ্ঞাপন এবং ডোমেইন, হোস্টিং কেনার জন্য ডলার নিয়ে থাকেন।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোর অনলাইন ব্যবসার দিকে তাকালে বুঝা যায় বাংলাদেশে অনলাইন ব্যবসা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
মানুষ এখন অনলাইনে বসে ইনকাম করতে চায়, নিজের ব্যবসা দাঁড় করতে চায়।
বর্তমানে অনেকেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ই-কমার্স ব্যবসা এবং Google AdSense পাবলিশার হিসাবে কাজ করছেন।

যাই হোক না কেনো, অনলাইন থেকে মানুষ যা আয় করছে তা দিয়ে পুনরায় রি-সাইকেল করে আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু করা সম্ভব হচ্ছেনা।

আমি অনেক ফেইসবুক গ্রুপে দেখেছি যেখানে বাংলাদেশী মানুষ তাদের ফেসবুক বুস্টিং / প্রচার সম্পর্কে চিন্তিত। তাদের কাছে ফেসবুকে টাকা দেওয়ার উপায় নেই, তাই তারা অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে থাকেন এবং অনেক বড়ো বড়ো প্রতারণার শিকার হয়ে কষ্টের কথা গ্রুপে / তাদের প্রোফাইলে শেয়ার করেন। 🙁

কিন্তু এই কাজটি আমাদের জন্য সহজ হওয়া উচিত যেন আমরা সহজেই আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে পারি।

অনেক কথা বলে ফেল্লাম। 😛 চলুন এবার সমাধান খোঁজা যাক।

এই সকল সমস্যার সমাধান কি?
এক নাম্বার সমাধান হচ্ছে পেপাল। কিন্তু, দুঃখের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে পেপাল নেই। কিন্তু আমাদের পাশের দেশ মিয়ানমারেও পেপাল তাদের সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। 🙁

আগামী ৫/১০ বছরেও আমরা পেপ্যাল ​​বাংলাদেশে পাবো কিনা তার কোন গেরান্টি নেই।

সুতরাং, আমাদের খুঁজতে হবে পেপালের বিকল্প কি আছে?

আমাদের কাছে পেওনার কার্ড, স্ক্রিল, পেজা, নেটেলার ইত্যাদি পেমেন্ট গেটওয়ে রয়েছে।
তবে, পেওনার মাস্টার কার্ড ব্যতীত অন্যান্ন পেমেন্ট গেটওয়ে আমাদের কোন কাজেই লাগেনা। 🙁

তাদের বেশির ভাগই অনলাইন অর্থ প্রদানের সময় অর্থহীন।

**প্রথমে আমরা পেওনার প্রিপেইড কার্ড নিয়ে কথা বলবো:

payoneer card

বাংলাদেশের প্রায় সকল ফ্রিল্যান্সারের পেওনার কার্ড রয়েছে।
এই কার্ডের মাধ্যমে অর্থ আদান – প্রদান এবং বাংলাদেশী টাকায় উইথড্র করা যায়।

Payoneer সম্পর্কে আমার পোস্ট

পেনিয়ারের মাদ্ধমে আপনি যখন অনলাইন বাজারে কাজ করবেন তখন আপনি বিশ্বের যেকোনো ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ আদান – প্রদান করতে পারবেন। আপনি যদি কোনও অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ নাও করেন তারপরেও আপনি আপনার ক্লায়েন্টকে Payoneer এর মাধ্যমে বিল দিতে পারেন। আপনি বিশ্বের যেকোন দেশ থেকে আপনার টাকা উইথড্র করতে পারেন।

আপনি Payoneer বিশ্বব্যাপী অনলাইন বা অফলাইন ক্রয়ের জন্য ব্যবহার করতে পারেন যেখানে মাস্টার কার্ড সাপোর্ট করে। যদি আপনি এটিএম থেকে নিয়মিতভাবে টাকা উঠান সেক্ষেত্রেও চার্জ খুব কম।

কিন্তু মূল সমস্যাটি হবে তখন, যখন আপনি ফ্রিল্যান্সার না হয়ে USD লোড করতে যাবেন, কারণ বাংলাদেশ থেকে আপনি পাওনারে USD লোড করতে পারবেন না।

ফলস্বরূপ, অনেকের কাছেই কার্ডটি রয়েছে, যেহেতু এটি বিনামূল্যে পাওয়া যায়, কিন্তু আপনি এইটাতে বাংলাদেশ থেকে ডলার লোড করতে পারবেন না, আর কারোর কাছে পেলেও রেট বেশি দিয়ে কিনতে হবে বা প্রতারণার শিকার হবেন।

**এবার আমরা কথা বলবো ডুয়াল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে:

credit card

আপনি একজন বাংলাদেশী নাগরিক এবং আপনার কাছে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে যেখানে আপনি প্রতিমাসে অনেক অনেক লেনদেন করেন তবেই আপনি ডুয়াল কারেন্সির ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আপনি চাইলে সহজেই বাংলাদেশের কোন ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড পেতে পারবেন না।
ক্রেডিট কার্ড পেতে হলে আপনাকে চাকুরীজীবি হতে হবে, মিনিমান সেলারি থাকতে হবে, অথবা আপনার বিজনেস থাকতে হবে অথবা যেই ব্যাংক থেকে কার্ড নিবেন সেই ব্যাংকে এফডিআর বা ডিপিএস তাকতে হবে।

ধরুন আপনি সবকিছু ঠিকঠাক করে একটি ক্রেডিট কার্ড নিয়ে নিলেন, কিহ! এখন শান্তি আর শান্তি? বাংলাদেশের ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নিলে আপনার শান্তি বাড়বে না, বরং অনেক কমে যাবে। 😛

আমি কথাটি কেন বললাম? আপনার আশেপাশের খোঁজ নেন, যাদের ক্রেডিট কার্ড আছে এমন ২/৩ জনের সাথে কথা বললেই বুঝে যাবেন। 😉

এবার আসুন আসল কথায়! এবার আমি কথা বলবো এমন একটি কার্ড নিয়ে যা দিয়ে আপনি বাংলাদেশে বসেই বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে ডলার লোড দিতে পারবেন এবং প্রয়োজন মতো খরচ করতে পারবেন।

**ইস্টার্ন ব্যাংকের ইবিএল মাস্টারকার্ড (একুয়া প্রিপেইড কার্ড) ডুয়েল কারেন্সি:

ebl master card

আমি এই কার্ডটি পেয়েছি মাত্র কয়েক দিন আগে।
এই কার্ড সেম টু সেম পেওনার-এর মতো এবং আপনাকে শুধুমাত্র 1,150/- টাকা খরচ করে কার্ডটি নিতে হবে। তাও তিন বছর পরপর মাত্র 1,150/- টাকা দিয়ে রিনিউ করবেন। আর কোন চার্জ নেই।

একুয়া প্রিপেইড মাস্টার কার্ডটি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড বাংলাদেশী ফ্রীলান্সারদের জন্য চালু করেছে।
আমি মনে করি তারা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনলাইনে আউটসোরসিং এবং ফ্রিল্যাংসিং এর গুরুত্ব অনুধাবন করে এই পদক্ষেপ নিয়েছে। আশার কথা এইযে, এই কার্ডে তেমন কোন চার্জ নাই। এবং খুব সহজেই বাংলাদেশ থেকে আপনি আপনার কার্ডে ডলার লোড করে নিতে পারবেন তাও ফ্রি তে। মানে ডলার অ্যাড করলে কোন চার্জ কাটবে না। 🙂 আর ডলার রেট বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিদিনের আপ-ডাউনের উপর নির্ভরশীল। হয়তো ১/২ টাকা এদিক-সেদিক হতে পারে।
কিন্তু আমি মনে করি ১/২ টাকার জন্য তেমন কোন অসুবিধা হবেনা।
কারণ হিসেবে বলবো: আপনি যখন পেওনারে ডলার কিনতেন তখন কিন্তু আপনাকে ৮৫-১০০ পর্যন্ত প্রতি ডলারে গুনতে হতো।
যেখানে প্রতি ডলারে ১০/২০ টাকা বেশি দেয়া লাগতো সেখানে ১/২ টাকা কিছুই না। বাংলাদেশ থেকে এমন একটি সার্ভিস পাওয়া সত্যিই আনন্দের।

আপনি চাইলে আপনার ইবিএল একাউন্ট থেকে সরাসরি কার্ডে লোড করতে পারবেন অথবা আপনি যেকোনো ইবিএল শাখায় গিয়ে যখন খুশি যেকোনো পরিমান ডলার / বাংলাদেশী টাকা জমা করতে পারবেন।

এই কার্ডটি বাংলাদেশের অনেক তরুণ উদ্যোক্তাদের সকল সমস্যার সমাধান করবে বলে আশা রাখি।

এই কার্ডটি পেতে তেমন কিছুই লাগবে না, তবে আপনার বয়স কমপক্ষে 18 বছর হতে হবে, অবশ্যই বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে। তবে, ইউএসডি কারেন্সি ব্যবহার করতে হলে নিয়ম অনুযায়ী আপনার পাসপোর্ট প্রয়োজন হবে।

আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি, আমাদের পরবর্তী পোষ্টে একুয়া প্রিপেইড কার্ডের বিস্তারিত থাকবে, সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন আর অবশ্যই উড্ডয়নের সাথেই থাকবেন।
আল্লাহ হাফেজ…।

লেখক পরিচিতিঃ

Faruk Hossain Mithu
Faruk Hossain Mithuhttps://mithu.kholifa.com
I'm Linux Admin, traveler with a passion for movies, tech and programming. Navigating the digital realm with expertise, I enjoy exploring diverse landscapes and staying at the forefront of technology trends. Code enthusiast and cinephile, blending a love for innovation with a sense of adventure.
- বিজ্ঞাপন -
সম্পর্কিত পোস্টগুলো
- বিজ্ঞাপন -

জনপ্রিয় পোস্টগুলো

- বিজ্ঞাপন -
error: Content is protected !!